জাপানের ভিসা করতে কত টাকা লাগে

জাপানে ভ্রমণ, শিক্ষা বা কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রাপ্তি প্রক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হলো।

জাপান যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা ফি

জাপানের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য কোনো ভিসা ফি প্রযোজ্য নয়। । তবে, ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য VFS গ্লোবাল সার্ভিস ফি হিসেবে ১,৯০০ টাকা গ্রহণ করে। উল্লেখ্য, ভিসা আবেদন এখন সরাসরি জাপান দূতাবাসে নয়, বরং VFS গ্লোবালের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। নতুন এই প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীদের ইন্টারভিউ দিতে হয় না; জমা দেওয়া ডকুমেন্টের ভিত্তিতে ভিসা ইস্যু করা হয়। এই পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ এবং দ্রুত করেছে।

জাপানের ভিসা করতে কত টাকা লাগে?

ভিসার ধরন অনুযায়ী আনুষঙ্গিক খরচের পরিমাণ পরিবর্তিত হয়। নিচে বিভিন্ন ভিসার ধরন এবং আনুমানিক খরচ উল্লেখ করা হলো:

১. টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (TITP) ভিসা

এই ভিসার মাধ্যমে প্রার্থীরা জাপানে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আনুমানিক খরচ ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা হতে পারে।

২. স্পেসিফাইড স্কিলড ওয়ার্কার (SSW) ভিসা
এই ভিসা প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীদের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এক্ষেত্রে আনুমানিক খরচ ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা হতে পারে।

৩. ইন্টারন্যাশনাল জব ভিসা
উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং জাপানি ভাষায় দক্ষতা থাকলে এই ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে আনুমানিক খরচ ১২ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা হতে পারে।

৪. স্টুডেন্ট ভিসা
জাপানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য এই ভিসা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আনুমানিক খরচ ১০ থেকে ১১ লক্ষ টাকা হতে পারে।

৫. ট্যুরিস্ট ভিসা
জাপানে পর্যটন উদ্দেশ্যে ভ্রমণের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আনুমানিক খরচ ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা হতে পারে, যা ফ্লাইট, থাকা-খাওয়া এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ অন্তর্ভুক্ত করে।

জাপান যাওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া

জাপান যাওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া নির্ভর করে আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্যের ওপর। সাধারণত, তিন ধরনের ভিসা আবেদন করা হয়—

১. ট্যুরিস্ট বা স্বল্পমেয়াদি ভিসা (Short-Term Visa)
যদি আপনি ভ্রমণ, বন্ধু বা আত্মীয়দের সাথে দেখা, ব্যবসায়িক মিটিং, বা স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য জাপান যেতে চান, তাহলে এই ভিসা প্রয়োজন।
আবেদন প্রক্রিয়া:
– প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
– পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে)।
– পূরণ করা ভিসা আবেদন ফর্ম।
– পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সাম্প্রতিক)।
– ফ্লাইট ও হোটেল বুকিং কনফারমেশন।
– ব্যাংক স্টেটমেন্ট (শেষ ৬ মাসের)।
– ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন (যদি থাকে)।
– চাকুরিজীবীদের জন্য চাকরির প্রত্যয়নপত্র বা ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার নথি।
– আমন্ত্রণ পত্র (যদি কেউ আমন্ত্রণ জানায়)।

২. কর্মসংস্থান বা ওয়ার্ক ভিসা (Work Visa)
জাপানে কাজের জন্য যেতে হলে আপনাকে স্পন্সরশিপের মাধ্যমে ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া:
– প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:।
– জাপানি কোম্পানি থেকে স্পন্সরশিপ লেটার।
– কর্মসংস্থান চুক্তিপত্র।
– শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার সনদ।
– পাসপোর্ট ও ছবি ।
– সার্টিফিকেট অব এলিজিবিলিটি (COE), যা কোম্পানি আপনার হয়ে আবেদন করে।

৩. স্টুডেন্ট ভিসা (Student Visa)
জাপানে পড়াশোনা করতে চাইলে স্টুডেন্ট ভিসা প্রয়োজন হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া:
– প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
– জাপানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি নিশ্চিতকরণ পত্র ।
– টিউশন ফি প্রদান সংক্রান্ত তথ্য ।
– ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট (ব্যাংক ব্যালেন্স বা স্পন্সরের তথ্য)।
– শিক্ষা সংক্রান্ত নথি ।
– সার্টিফিকেট অব এলিজিবিলিটি (COE) ।

জাপান যাওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া কোথায় করতে হবে?

আপনাকে বাংলাদেশে জাপানি দূতাবাস বা কনস্যুলেটে গিয়ে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে সরাসরি আবেদন সম্ভব নয়, তবে কিছু এজেন্সি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

জাপান যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিপত্র

ভিসা আবেদনের জন্য নিম্নলিখিত নথিপত্র প্রয়োজন:

-আবেদন ফর্ম: সঠিকভাবে পূরণকৃত আবেদন ফর্ম।
-পাসপোর্ট: কমপক্ষে ছয় মাসের মেয়াদসহ বৈধ পাসপোর্ট এবং তার ফটোকপি।
-পূর্ববর্তী পাসপোর্ট: যদি থাকে, পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এবং তার ফটোকপি।
-ছবি: সাম্প্রতিক তোলা ৩.৫ x ৪.৫ সেমি সাইজের দুই কপি রঙিন ছবি।
-ফ্লাইট বুকিং: এয়ারলাইন্স বুকিং কপি।
-হোটেল বুকিং: হোটেল বুকিং কপি।
-আয়কর পরিশোধের প্রমাণপত্র: সর্বশেষ তিন বছরের ট্যাক্স পেমেন্ট রিসিপ্ট।
-ব্যাংক স্টেটমেন্ট: সর্বশেষ ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
-ভ্রমণ পরিকল্পনা: ভিজিট শিডিউল।
-কভার লেটার: ব্যক্তিগত বা পেশাগত বিবরণসহ কভার লেটার।
-নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC): কর্মস্থল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে।
-যদি জাপানে কোনো গ্যারান্টার থাকে, তাহলে অতিরিক্ত নথিপত্রের প্রয়োজন হতে পারে, যেমন:
–ইনভাইটেশন লেটার: গ্যারান্টারের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পত্র।
–সম্পর্কের প্রমাণপত্র: গ্যারান্টারের সাথে সম্পর্কের প্রমাণপত্র।
–গ্যারান্টারের ব্যাংক স্টেটমেন্ট|

জাপান যাওয়ার এজেন্সি

জাপানে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করতে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি কাজ করে থাকে। এসব এজেন্সি ডকুমেন্ট প্রসেসিং, চাকরির ব্যবস্থা, ভাষার প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে।
তবে, নির্ভরযোগ্য এজেন্সি নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি, কারণ প্রতারণামূলক বা ভুয়া এজেন্সির মাধ্যমে ভোগান্তিতে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। বাংলাদেশ থেকে জাপানে যাওয়ার জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে দাই ইচি একাডেমী,বিএমইটি, বোয়েসেল, এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

জাপানে যেতে বয়সসীমা কত?

জাপানে যাওয়ার জন্য বয়সসীমা নির্ভর করে ভিসার ধরন অনুযায়ী।
– ওয়ার্ক পারমিট ভিসা:আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
– বিজনেস ভিসা: আবেদনকারীর ন্যূনতম বয়স হতে হবে ২১ বছর।

স্টুডেন্ট ভিসা:

– স্নাতক প্রোগ্রামের জন্য ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর।
– স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য ন্যূনতম বয়স ২১ বছর।

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করার আগে জাপানের ঢাকাস্থ দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ নির্দেশনা ও ফি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।প্রয়োজনীয় নথি সঠিকভাবে প্রস্তুত করুন এবং সময়মতো জমা দিন।ভ্রমণের পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিসার জন্য আবেদন করুন, যাতে সময়মতো ভিসা প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।সঠিক তথ্য ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে আবেদন করলে জাপানের ভিসা প্রাপ্তি সহজ হবে।

Have any Question?

Ask us anything, we’d love to answer!